নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ সৃস্টি হয়েছে। তার ক্ষমতার দাপটে ভুক্তভোগী পরিবার অসহায়। রাজউকের একটি স্বনামধন্য রাস্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত একজন কর্মকর্তা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ জেনেও না জানার ভান করছে। সূত্র বলছে, তার দাপটের কাছে কর্তৃপক্ষও অসহায়। যে কারণে তারা শাস্তির বদলে তাকে সমীহ করে চলেন। আর এ জন্য তারা নীরব নির্বিকার। আলোচিত সমালোচিত সেই কর্মকর্তার নাম সোহাগ মিয়া।
তাকে সবাই পিস্তল সোহাগ নামেই তাকে চেনেন। কারণ তার লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজউকের উপ-পরিচালক পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তার জীবন কেন ঝুঁকিপুর্ণ। তার নিরাপত্তার জন্য সারাক্ষণ কেন পিস্তল প্রয়োজন হবে?
এ প্রসঙ্গে অনেকেই বলছেন, তিনি নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত বিধায় তার পিস্তলের প্রয়োজন রয়েছে। অথচ রাজউকে কর্মরত অসংখ্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের কারোরই পিস্তলের প্রয়ােজন হয় না।বিগত সময় রাজউকের একজন চেয়ারম্যানের রুমে হট্টগোলের সূত্র ধরে উক্ত আলোচিত সোহাগ মিয়া পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেন। সেই সময় থেকেই তিনি পিস্তল সোহাগ হিসেবে আলোচনায় আসেন।
আওয়ামী সরকারের আমলে বাগেরহাটের পলাতক সাবেক এমপি শেখ হেলালের পিএস ওবায়েদের নিকটাত্মীয় উক্ত সোহাগ মিয়া। সেই সুবাধে ফ্যাশন হিসেবে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে একটি পিস্তলের লাইসেন্স দিতে বাধ্য করেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক পাঞ্জেরীর অনুসন্ধানে একটি কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটের প্রতারনার কাগজপত্র হস্তগত হয়েছে। যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। রাজধানীর উত্তরা ৬ নং সেক্টরের ৬নং রােডের ১১ নং প্লটের মালিক নাহিদা রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার যৌথ উদ্যোগে ভবন নির্মাণের চুক্তিপত্র সম্পাদন করে মধ্যসত্ত্বভোগী হিসেবে ১টি ফ্ল্যাট ভাগিয়ে নেন সোহাগ মিয়া।
পরবর্তীতে উক্ত ভবনটি রিভাইসড প্লান করার শর্তে আরও ১০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন সুকৌশলে। উক্ত সোহাগ মিয়া ফ্ল্যাটটি নির্মাণ করতে ডেভেলপারের চুক্তির বহির্ভূত আয়তন ২২০০ বর্গফুটের রাজউক অনুমোদিত বর্গফুটের বাইরেও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারকে চাপ দিয়ে ফ্লােরের আয়তন ২৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। উক্ত ফ্ল্যাটটির অংশে উচ্চ মূল্যের নির্মাণ সামগ্রী লাগানোর দাবি করেন এবং সোহাগ মিয়ার ফ্ল্যাটটির নির্মাণ সামগ্রী ভালোমানের লাগানোর পরও অতিরিক্ত ইন্টেরিয়ার ডেকারেশন ওয়ার্ক দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, এ কারণে সোহাগ মিয়া তার পিস্তল দিয়ে সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে ভয়ভীতিসহ জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। সোহাগ মিয়া পিস্তল নিয়ে রাজউক ভবনে নিয়মিত অফিস করেন।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, রাজউকের উক্ত কর্মকর্তা একজন মামলাবাজ। সোহাগ মিয়া এতই ক্ষমতাধর যে, কথায় কথায় মানুষের নামে বিভিন্ন আদালত ও থানায় মামলা টুকে দেন। যে কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। সোহাগ মিয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উক্ত জমির মালিক নাহিদ রহমান আত্মগোপনে চলেন যান। এদিকে জমির সমস্যা সমাধান করতে নাহিদ রহমান এবং এলাকাবাসীর যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে তার ভাতিজা শাহিদ মিয়াকে দিয়ে ঢাকার একটি আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করান। অভিযোগ রয়েছে, ধুরন্ধর ও ধূর্ত রাজউক কর্মকর্তা সোহাগ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তার আত্মীয় স্বজনকে ব্যবহার করে সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পরিচালকগণের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করান।
এছাড়াও সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিভিন্ন প্রজেক্টের চলমান উন্নয়ন কাজে একের পর এক বাধা সৃষ্টি করেন সোহাগ মিয়া গং। এতে স্বনামধন্য কোম্পানিটির সুনাম হারাতে বসেছে। উক্ত ডেভেলপার কোম্পানির পরিচালকগণ জানান, ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে উদ্ভট সংবাদ পরিবেশন করান তিনি। তারা আরও জানান, রাজউক কর্মকর্তা সোহাগ মিয়া নানা কৌশলে সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সেবাপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন দীর্ঘ দিন থেকে। ভুক্তভোগী পরিচালকগণ সোহাগ মিয়ার নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারে শীর্ষ মহলে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
এছাড়া কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায়ও ফৌজদারি আইনে আরও একটি মামলা রয়েছে তার নামে। ঢাকার একটি আদালতে ৪০ লাখ টাকার চেকের মামলাসহ বিভিন্ন লোককে রাজউকের প্লট পাইয়ে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে সোহাগ মিয়ার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ভবন নির্মাণে রাজউকের প্লান পাশ এবং অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাহাড় সমান অভিযোগ থাকার পরেও সোহাগ মিয়া এখনও বহাল তবিয়তে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে তার ক্ষমতার উৎস কোথায়? কেনই বা তার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না। এ প্রশ্ন এখন বোদ্দামহলের।