নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছোঁয়া লাগেনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্চাচারীদের মাঝে জুন মাসে থেকে শুরু হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও বৈষম্য রয়ে গেছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সকল বিভাগে। অভিযোগ উঠেছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট গণপূর্ত অধিদপ্তরের৷ থোদ প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করার মতো গুরুতর এক অভিযোগ উঠেছে ।অভিযোগ উঠেছে ক্যাসিনো কেলেংকারীর জিকে শামীম এবং প্রধান প্রকৌশলী পরস্পরের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এর ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী সাবিনা আলমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।নোটিশে দুদক বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আশরাফুল আলম ও সাবিনা আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যেরভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নিজেদের, নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এরপরও থেমে নেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের দুর্নীতি। নানা লবিং-তদবির করে দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া শতশত কোটি টাকা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীও হয়েছেন তিনি।
গত ২৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর এক লিখিত আবেদনে এসব অভিযোগ করেন তৌফিক ইসলাম নামে একজন ঠিকাদার।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, আশরাফুল আলম প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা তদন্ত ব্যাহত হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি। তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল রেখে তদন্ত করলে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ারও আশঙ্কা করছি। এই আশরাফুল আলম যুবলীগের কথিত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের সদস্য। জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল আলমের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় ।প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর তার দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপ আরো বেড়েছে। তার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের ফলে গণপূর্ত অধিদপ্তর কলঙ্কিত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান আশরাফুল আলম। তার আগে তিনি ওই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। গত বছর শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার হন ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)।
তার সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এদের মধ্যে আশরাফুল আলমসহ সাবেক তিন প্রধান প্রকৌশলীর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীও আছেন।
পরিবারের সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন তিনি। এছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ি ও কাছের আত্মীয়দের নামে রয়েছে কৃষিজমি ও ব্যবসা। মালয়েশিয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে সেকেন্ড হোম করেছেন এই প্রকৌশলী। এসবের পাশাপাশি আশরাফুল আলমের নামে বেনামে রয়েছে আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ। প্রকৌশলী নেতাদের সখ্যের প্রভাব খাটিয়ে আশরাফুল আলম কর্মস্থলে বিভিন্ন অনৈতিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ডের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায় করেন।
উল্লেখিত অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিষয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য জানতে তার দফতরে ফোন করা হলে ফোনের অপর প্রান্তে থেকে তার সহকারী পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি বলেন স্যার মিটিংয়ে আছেন। তাছাড়া স্যার যারতার সাথে কথা বলেন না। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন।