প্লাস্টিকের ভয়াবহতায় বুড়িগঙ্গার অস্তিত্বই যেন বিলীন হতে বসেছে। এই নদীর পানিতে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মিশ্রিত প্লাস্টিকের বোতল ও টুকরা ধোয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ব্যবহৃত মেডিকেল বর্জ্য, শিল্প-কারখানার বর্জ্য, সুয়্যারেজের বর্জ্য, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যও যোগ হচ্ছে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে। বুড়িগঙ্গার নদীর দুই পাড় এখন অবৈধ প্লাস্টিক কারখানার দখলে। সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দূষিত প্লাস্টিক বর্জ্য ধোয়া হচ্ছে। এতে বুড়িগঙ্গার পানি যেমন দূষণ, তেমনি তা আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ছে। ওই পানি ব্যবহারে মানুষের চর্মরোগ, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ফুসফুস ড্যামেজসহ নানারকম রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়ছে।
শুক্রবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মিশ্রিত প্লাস্টিকের টুকরা ও ওষুধের বোতল পরিষ্কার করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের টুকরা ভর্তি অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বস্তা পাশাপাশি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশেই ওই পানিতে শ্রমজীবী মানুষ, শিশু-কিশোররা গোসল করছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, প্রায় ৪০০ বছর আগে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা নগরী গড়ে ওঠে। সেই বুড়িগঙ্গা আজ প্রাণহীন প্লাস্টিক আর পলিথিনের বর্জ্য।ে নদীর দুই প্রান্তে গড়ে উঠেছে শত শত প্লাস্টিকের কারখানা। সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করা পলিথিন আর প্লাস্টিক ধোয়ার কাজে ব্যবহার হয় বুড়িগঙ্গার পানি।
স্থানীয়রা জানান, এখানে বহু কারখানা রয়েছে। নদীতে যা ধোয়া হচ্ছে, তাতে পানি দূষিত হচ্ছে। এটাকে এখন নদী না বলে ডাস্টবিন বলা যায়। সবাই জানে কারা ধ্বংস করছে এই পরিবেশ কিন্তু কেউ নাম বলতে চায় না। তবে যে কোনোভাবেই এটা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা।
নদী বাঁচাও আন্দোলন কর্মীরা বলছেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতির কথা ভেবে দেশে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরও দেশে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। যার বেশিরভাগ ফেলা হয় নদীতে। এর প্রভাবে মানুষ, পশুপাখি ও প্রাণী ও আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে। প্লাস্টিকের এ ভয়াবহতা রুখতে পরিবেশ অধিদপ্তরকেই দায়িত্ব নিতে হবে।