পাকিস্তানে এবারের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। বরং, দলীয়ভাবে নির্বাচন করেও আসন সংখ্যায় ইমরান খান সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন। ফলে সরকার গড়তে জোট গঠনের বিকল্প নেই তাদের হাতে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য জোট শরিক পিপিপি থেকে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে। আলোচনায় রয়েছে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টিও। কিন্তু পিএমএল-এন সূত্র বলছে, তাদের সুপ্রিম নেতা নওয়াজ শরিফ আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে চান। গড়তে চান চতুর্থবার সরকারপ্রধান হওয়ার রেকর্ড।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পিএমএল-এনের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, জাতীয় ও পাঞ্জাবের বিধানসভায় ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মুলা নিয়ে গত সোমবার দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন এবং তার নাম অনুমোদনের জন্য পিপিপির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়েও কথা হয়েছে সেখানে।
সূত্রটি বলেছে, নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার চিন্তা এখন পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়নি। যেহেতু পিএমএল-এন’কে কেন্দ্রীয় জোটের নেতৃত্ব দিতে হবে, তাই মরিয়ম নওয়াজ শিবিরের অনেকে মনে করছেন, চালকের আসনে নওয়াজ শরিফেরই বসা উচিত।
জানা যায়, নির্বাচনের আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ্রহপ্রকাশ করেছিলেন নওয়াজ। কিন্তু গত ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে অপ্রত্যাশিত ফলাফল তাকে ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। এখন লোভনীয় পদটির জন্য তার ছোটভাই শাহবাজ শরিফের নাম ‘জনপ্রিয়’ হিসেবে উঠে আসছে।
সম্প্রতি পিএমএল-এন নেতা খাজা আসিফ স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন, বড় ভাই নওয়াজ নন, শাহবাজই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন।
আসিফের ওই মন্তব্যের বিষয়ে দলের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, পিএমএল-এন এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেনি। সোমবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, জোটের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে এবং তাদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসময় পিপিপি’র সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন পিএমএল-এন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দলের মধ্যে নীতিগত একটি চুক্তি হয়েছে মাত্র।
বিভেদের শঙ্কা?
পিএমএল-এন আগে বলেছিল, কেন্দ্রে সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে দলটি মাত্র ৭৯টি আসন পেতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর জিতেছেন ৯২টি আসনে। এই পটভূমিতে পিএমএল-এন আগের অবস্থান পর্যালোচনা করেছে এবং জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দলটির একাংশ মনে করে, নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী এবং শাহবাজ শরিফকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত। এভাবে কেন্দ্র এবং বৃহত্তম প্রদেশ উভয়কে ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে।
পিপিপি যেন কোনো আপত্তি বা ‘অগ্রহণযোগ্য দাবি’ উত্থাপন না করে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন সে বিষয়ে পিএমএল-এনের শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
সূত্র বলেছে, আসিফ আলি জারদারি এবং বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির সঙ্গে শাহবাজ শরিফের বৈঠকের সময় ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী স্লটের নাম নিয়ে নয়।
সূত্র আরও জানায়, নওয়াজ শিবির প্রধানমন্ত্রিত্বের বিনিময়ে বেশ কয়েকটি লোভনীয় পদ— যেমন- প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং সিনেট চেয়ারম্যানের কার্যালয়— পিপিপি’র হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হতে পারে।
এমন প্রেক্ষাপটে পিএমএল-এন এবং পিপিপির মধ্যে দুটি কারণে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে; প্রথমত, পিপিপি যদি বিলাওয়ালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্লট চায় এবং দ্বিতীয়ত, তারা যদি প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজের নাম নিয়ে একমত না হয়।
সূত্র বলেছে, নওয়াজকে যদি প্রধানমন্ত্রী করা না হয়, তবে তার মেয়ে মরিয়মকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী করার জোরালো দাবি উঠতে পারে।